Nirzhar Noishabdya is a Bangladeshi Poetry-writer, fiction-writer, artist and designer. He is also a blogger and activist. Born on 24 August 1981. Studied in painting from University of Chittagong, Bangladesh. He has already published eleven books.
প্রকাশিত বই : 'পাখি ও পাপ' (২০১১, কবিতা), 'শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১, মুক্তগদ্য), ডুবোজ্বর (২০১২, গল্প), কাপালিকের চোখের রং' (২০১৩, কবিতা), 'পুরুষপাখি' (২০১৪, মুক্তগদ্য), 'আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক' (২০১৫, প্রবন্ধ), 'মহিষের হাসি' (২০১৫, কবিতা), 'রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয়' (২০১৬, গল্প), 'আকাশ ফুরিয়ে যায়' (২০১৭, মুক্তগদ্য), 'হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস' (২০১৭, কবিতা)। সম্পাদিত বই : 'ওঙ্কারসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের শ্রুতিলিপি' (২০১৭)।
সম্পাদিত ছোটোকাগজ :' মুক্তগদ্য' ।
এ ছাড়া পূর্বে আরো সম্পাদনা করেছেন জলপত্র, চারপৃষ্ঠা মেঘইত্যাদি।
আর সম্পাদনা করেন 'কথাবলি' [kothaboli.com] নামে সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি পোর্টাল।
যে বাতাসে ভেসে তোমাদের দেশে আসি কিছু মদ আর বিষাদ জমিয়ে রাখি বাতাস ঝড় হবে না বলে আমাকে ভাসায় আমি উদ্ভ্রান্ত দিনের পেটে ঘুমিয়ে থাকি কাঁথার ভিতর জেগে থাকে রোদের পাথর তার উত্তরে ছিলো দীর্ঘ রাতের নিশ্বাস তোমাদের দরোজায় ডাকে শাদা রাজহাঁস এই ভেবে আমি জেগেছিলাম চারশোবছর
ঘুম ভেঙে গেলে বুকে রেখে ফুল ও ছুরি সহোদরা ও প্রেমিকার মৃত্যু কামনা করি
খড় আর ঘর যূথবদ্ধ ১৪১২০৫-৩
যে আধ্যাস বাঁচিয়ে রাখে শীত আর গ্রীষ্মের পেলবতা শ্যামামেয়ের দেহের ঘর তা বুঝে না কাতরতায় কাতরতা সঙ্গোপন আয়নার প্রতি অভিশাপ নয় অভিশাপ যে উৎসের সন্ধানে উৎসবের মহড়ায় পৌঁছে দীপ জাগায় দিগ্বিদিক দীপের আলো পোড়াতে চায় মাঠে মাঠে খড়ের সংসার
খড় আর ঘরের যোগ বুঝে না শ্যামামেয়ে খড় আর ঘর যূথবদ্ধ অভিমান
আমি তার হাড় এবং তৃষ্ণা ১৬১২০৯-১
হাওয়াহীন রাতের ধারে প্রেত এসে শোয় সে দূরবর্তী শব্দ শুনে কাতর তিনমাইল বদলে যায় সমাধিফলকে মৃতের স্মৃতি দৃষ্টি আর দৃশ্যের ভিতর ভেঙে পড়ে শীত মাস শেষে সে পলকা তুলোর সুরতাল কাঠের ফ্রেমে আটকে রাখে প্রজাপতি নখরেখায় ঝুলিয়ে দেয় পুঁইলতার ছবি কফিনের কপাটে ঝিলিমিল করে রামধনু
একদা তার তৃষ্ণা ছিলো সিদ্ধার্থের রূপ তার হাড় ছিলো অদম্য মহিষের পাল আমি তার হাড় এবং তৃষ্ণা পাল্টে দিলাম
আমার ঘর জানলাবিহীন ০৫১২০৫
রাত্রি তোমাকে আর ছোঁবো না জেগে জেগে অস্পৃশ্য আমি খুলে নেবো চোখ থেকে চোখের কপাট স্বপ্নের অন্ধসম্ভাবনা অশ্রুর নোনতা যন্ত্রণা
আমি ফিরবো না তোমার মায়াগৃহে ঘরের ছায়া মরে পড়ে থাকে বাড়ির শরীরে আমার ঘর জানলাবিহীন খুব উত্তরে
নপুংসকের ঠোঁটেও জেগে থাকে একা ০১০৪০৫
ওখানে দুচোখের ক্ষিপ্ররাতে নির্জনমাঠের খেলা দিনভর ফালি ফালি করে শস্যের ক্ষেত চিরে মায়াবীগন্ধ ক্রমশ অনূদিত চোখ যে চোখ ছিলো মাছের গাছের ক্ষীণতোয়া জলার বৃশ্চিক ফসলের দেশে মায়াবী আরক চুরি যায় অমরত্বের স্বপ্ন প্রলম্বিত করে পাখিস্বভাব দূরপাহাড়ের ছায়া খুঁজে ফেরে কে কার স্তনের সকাশে জানে না অবিনাশি ভুল
কে কবে পান করে ছায়ারাশি নপুংসকের ঠোঁটেও জেগে থাকে একা বাঁশপাতার বাঁশি
আমার বুক থেকে চুরি করে ২৬০১০৬
এখানে প্রাচীরের ছায়া লেলিহান জ্বর প্রিয়তম যাতনা বসো একটু দূরে ছায়াতলে শুয়েছে নিশ্চুপ রোদের শহর
শরীরে কাটাদাগ মৎস্যগন্ধ ছাই শরীরে কাটাদাগ আর চিহ্ন নাই চিনে নেবে ডানহাতে ছিন্নদুপুর শুয়েছে সে আমার বুক থেকে চুরি করে শস্যের সুর
তালাটা বন্ধ ০২০৩০৬-৪
খুলে খুলে গন্ধ শুঁকি গন্ধটাই পার করে দেয় প্রাচীরের সুদৃশ্যফটক তাল তাল তুলে আনি অস্পৃশ্যমাছের যৌবন যৌবনের নির্যাসটাই বেঁচে থাকে দেখি আর গন্ধ শুঁকি
তালাটা বন্ধ থাকে
দৃশ্যখাদকের চোখে ভাঁজ ২২০৫১০
আমি বিষাদিত এবং অবশেষে ধৃত মাছ যেইরূপে মৎস্যে পরিণত ফাতনায় দোলে হংসমান লোভ আমি বিষাদিত
স্যাকারিন সন্ধ্যায় আমি এবং আমার চোখ আমরা দুজন অনায়াসে তিনজন
বড়শি ঝুলে আছে অগভীর জলে অদূরে জঙ্গলের কোলাহল শোনা যায় আর আমি মৎস্য আমি বিষাদিত নিষ্পলক মৃত্যু
দৃশ্যখাদকের চোখে ভাঁজ করা ঘুম
এখনো দেখি বিস্ময় তুমি ০৭০১০৬
রতিগন্ধ পালক খুলে রেখে গেছে চিল পালকে নয় আমার মন চিলের পিছেই দিয়েছে উড়াল ছুঁতে পারি নি চিল দেখেছি খুব চিলের চোখে ঘৃতকুমারী রঙ হয়েছে প্রবাল প্রবাল তুমি কি পাথর ছিলে
এখনো দেখি বিস্ময় তুমি পাথর
খরাঠোঁটে নদী ঢেলে ২৪০৬০৫
একখানি ঝলমলে বাদামপাতায় দেয়ালগুলির রঙ লেখা ছিলো পলেস্তরায় ধস প্রাচীন ইটগুলি দিচ্ছিলো উঁকি চন্দনের বনে এই বন নির্জনমাঠের ক্লান্তি চুরি করে সাজিয়েছে একদিন সকামডালে পাতায় পাতায় তার বিধবা চুম্বনরাশি একটি পথের রেখা ছুঁয়েছিলো পথ ঘুরপথে বনটাকে করে আছে আবেষ্টন
বলেছিলাম চুম্বন হোক শাশ্বতঋজু বুক চিরে রেখে যাক সজ্জ্বলপদরেখা খরাঠোঁটে নদী ঢেলে যায় নি যা আঁকা
মেঘের পাহাড়ে পাথর আসে ২৯০৮০৪
কোন চেতনায় কাটো তুমি মৌলিকপাথর পাথরের ঘুম ভেঙে খুলে পড়ে পাহাড়ের ঘর পাহাড় পড়ে থাকে শ্যাওলার ঝাড়ে শ্যাওলার রক্তে আর জাগে না পদ্ম পদ্মস্নানে ঘটে না কাদার আলতারাত রাতনেভা ক্লান্তির ঘরে কামুকসময় সময় রেখেছে হাত বেহাল সকালে সকালের শাড়িতে ঋতুগন্ধ ধুতুরার ফুল ধুতুরার বিষে নীল হয় না গাঙচিল গাঙচিলের নখে লেগে আছে মাছের আঁশ যে মাছ গহিনগাঙের সতীন সতীন রাতদিন পাশাপাশি সূর্যের চুম্বনে চুম্বন উড়ে চলে অনসূয়ামেঘের দেশে
মেঘের পাহাড়ে পাথর আসে প্রতিদিন ভেসে
পড়ে থাকে পাথরের ২৫০২০৬-৮
এখনো কাটা হয় নি তাকে স্বরূপে সে শুয়ে অথবা দাঁড়িয়ে ভাবে জন্মান্তরের কথা ছেনি হাতুড়ি সমস্ত জমা হয় গোপনে সে পালিয়ে যায় ঠাঁই নেয় ডোডোপাখির চোখে পড়ে থাকে পাথরের কঙ্কাল
অধীরতা গ্রাম ছেড়ে চলে ৩১০১০৬-২
ঝিমঝিম চোখে তাকিয়ে কান্ত কুকুর শুয়ে আছে নবীনধূলির আঁচলে আঁচল পাতা আছে গতজন্মের শরীরে স্তন তার বাড়ন্তশীতের বকুল শোয়া আছে আলোর মলিনসারথি নিতম্বে অপার নৈঃশব্দ্য ধরে সে বুকে হেঁটে পার হয় কাঁটা তৃণ কুকুর শুয়ে আছে অন্ধ অধীর
অধীরতা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে ভোরে
আমাকে ঘুমহীন দেখে নির্ঘুমরাত ১৯০৭০৫
সাপটাই প্রাণ সাপটাকে দুহাতে চেপে ধরে আরাত্রি সাঁতার রাত্রি আমার চোখদুটি খায় খেয়ে ফেলে চোখের নিচের ঝলমলে রোদের ছাতিম ঢেলে দেয় দুইটি কালোরাত ব্যথায় বিহ্বল
সাপটা বুকের ঘর ভাঙে বারংবার একাকীত্বে ঘুরে মরে আর মধুফুল ঝরে পড়ে থাকে রাস্তার পাঁকে এমন অন্ধজন তারপরও একটি জলের কাঙাল আর আমাকে ঘুমহীন দেখে নির্ঘুমরাত বলে গত হলো কাল
যা অংকের মতো ছক ০২০৩০৬-১
একটা টলটলে পুকুর এসে কথা বলে আমি তার পাড়ে বসি বুকে পা ডুবিয়ে একটা যন্ত্রণাকাতর মাছ আসে আমার আঙুল কেটে নিয়ে যায় দূরে রক্ত ক্রমশ রঙহীন হতে থাকে রঙহীনতার মধ্যে থাকে কেবল লাবণ্য যা অংকের মতো ছক তৈরি করে
চল যাই ছিন্ন হই রোদে পোড়া ০৫০৯০৫-৩
মা আমি শরীর হতে একটি কাঁটা তুলে ফেলেছি তুই এসে দেখ চিনিস কিনা এইকাঁটাভার বর্ণগন্ধহীনলাবণ্যসুরকোমলগান্ধার তোর জরায়ূতে বিঁধেছিলো নুন এর নাম অশ্রু চোখময় ফুটেছিলো এখন নেই সমুদ্রপ্রশান্তি নিয়ে গিয়েছে ডুবে চোখের ওপারে তোর চোখে এখনও বিঁধে আছে একই কণ্টক
মা তুলে ফেল সমূল এবং সমূলে ছিন্ন হই নাড়িঅশ্রুসন্ধিরক্তহাহাকার চল যাই ছিন্ন হই রোদে পোড়া বাতাসে আবার
আমি তাকে ছেড়ে ১৭০২০৬
এক মাতাল আমার হাতে চুমু খেলো আমি তার মাথায় হাত রেখে আদর করে দিলাম সে আশীর্বাদ ভেবে আমাকে প্রণাম করলো আমি তাকে ছেড়ে এলাম
সে কার ছিলো বলে ৩০০৪০৫-১
যে প্ররোচনায় আমি খুলেছি অকেশে আমি খুলেছি শিকড়ের অতল শিকল আমি খুলেছি শাদামেঘের ভস্ম বাকল আমি খুলেছি নদীমুখি রাতের করাত আমি খুলেছি কারো চোখের কাজল আমি খুলেছি সপ্তগন্ধ তারার হাসি ও কান্না
আমার হাত আঙুলবিহীন শিকড় খুলে বুঝেছি কিভাবে গাছবন বাকল খুলে বুঝেছি মেঘের শুদ্ধতা করাত খুলে বুঝেছি ঘাতকের যন্ত্রণা
যখন কাজল খুলেছি কাজল হয়েছে দীঘল রাত্রির অভিমান অভিমানের অধরে নক্ষত্রের ক্ষত আর সে রাত্রির দীর্ঘশ্বাস
যে প্ররোচিত করেছিলো সে কার ছিলো বলে নি তখনো
এইবার অস্পৃশ্য ১৯০৬০৬
নিহত হওয়ার পর নদীবন্দরে থাকি আমাকে সরিয়ে নাও আমার চোখ থেকে সকরুণহাত থেকে সরিয়ে নাও আমি দশটি আঙুল ভুলের রেখাচিত্র প্রোথিত দহনে এখানে উড়ছে স্মৃতির কুমির
প্রিয়তম কুকুরদল আমাকে সরিয়ে নাও হিজিবিজিচুল থেকে বুক থেকে গ্রীবা শিশ্ন জানু সবকিছু থেকে
এই অরণ্য একদিন আত্মঘাতী হবে প্রিয়তম পাখিরা একদিন তোমাদের সাথে দেখা হবে
একদা সে বটফুল স্বপ্নে দেখে ২৬০৩০৬
কোথাকার কোন সরোবরে উদ্ভিন্নসংবাহন স্বপ্নে দেখা বটফুল উজ্জীবিত দিনের পদভারে নত সন্ধ্যার দেহ মোমের ভদ্র গম্ভীর সলতে তার জ্বলতে থাকা কোমল অহঙ্কার প্রভাবিত করে কারো অনন্তর পিছিয়ে পড়া সে হয়তো উত্তীর্ণ হতে পারে অথবা পতন নিশ্চিত জেনেই ভাবনাতাড়িত ব্যঞ্জনাকে ধরে মোমের সলতে হয়ে যায় শূন্যতার সংবাহে
একদা সে বটফুল স্বপ্নে দেখেছিলো
আমার চিহ্নগুলিই হয়ে আছে ০৮০৫০৬
অনেকদিনের পথগুলি খুলে খুলে দেখি ভাঁজে ভাঁজে আমার পদচিহ্ন আছে সেদিনরাতের ঝড়ে ধূলিগুলি উড়ে তারপরে বৃষ্টিতে ক্রমশ কাদা সেদিন রাতের বাতাসে কারো ঘর পুড়ে যায় পুড়ে যায় প্রকৃত আগুনে পদচিহ্ন আর ধূলির পরিণতি সে জানে না সে আগুনের কথা ভেবে ভেবে অন্যমনা
অনেকদিনের পথ খুলে দেখি আমার চিহ্নগুলিই হয়ে আছে প্রকৃত আগুন
অন্যকাজে আপ্তবাক্য ২৫০৩০৬
সে অদূরে বসে থাকে ছড়িয়ে পালক খুব নিঃশব্দে তার পদশব্দ শুনি বুকের মধ্যে শুনতে শুনতে চুর হই চোখ বুজি ভাবি সে চুপিচাপ এসে সমুখে বসেছে কোমল ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার চোখ কম্পমান হাতের অসহায় আঙুল আমি তার পদশব্দ শুনে শুনে ছায়া তাকে সূর্য ভেবে চুর হয়ে থাকি মদালস তপে ঘোরলাগা গল্পকাল শেষ হয়ে আসে সূর্যাস্ত হয় আর সে অদূরে তেমনি বসে অন্যকাজে আপ্তবাক্য প্রতিবেশ
আমার নখে আছে আনন্দের ২৭০৫০৬-২
পাড়ের খবর বিহ্বলতাকে ছুঁয়ে পড়ে থাকে উড়ার কথা থাকে তার ভিতরে ভিতর বাহিরকে ডাকে অন্ধকারে দণ্ডিতশ্বাপদ গুটিয়ে সনখ আছি তোমাদের পাশে আকাশের সব তারা ঝরে যায় চুকে বানাই তারার চোখ যে কাঁদে সেই বাঁধে বাঁধন বড়বেশি উদ্ভিন্ন করে দেয় যাকিছু প্রকাশ পাড়ের খবর পায় না প্রকাশিত হওয়ার অবকাশ
বাহির আমাকে নাও আমার নখে আছে আনন্দের যন্ত্রণা
ভাগাড়ের ইতিহাস অর্ধমিথ্যা হয়ে ১৬১২০৯-২
সে ছেড়ে গেলে প্রলম্বিত হয় ভাগাড়ের পরিসর সে কি তবে রাতভর জেগে ভূত শিকার করে তুলতুলে ত্বকে শ্যাওলার বিস্তার চিনে চুর
একটি উদ্ভিদ বেড়ে বেড়ে নুয়ে পড়ে এখানে কান্না আর উল্লাসের প্রতিবিম্ব ধরে বেগুনি কীট সে আর লিখে নি সজলপত্র হরিৎ শয্যাগন্ধ ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন করে সূর্যের ভিতর সুধা ধীরে ধীরে রাত ভেঙে কয়লার পাশে রাখে কয়লার প্রেত পেছন ফিরে তাকায় ধিকিধিক
আমি দাঁড়িয়ে থাকি সুন্দরের বিপরীতে থির ভাগাড়ের ইতিহাস অর্ধমিথ্যা হয়ে উদ্গত হয়
গাধার পাখায় পালক গুঁজে দিলাম ০৪১০০৬
গাধার পিঠে বসে তার সাথে কথা বলে এলাম সে অন্যকোথাও বাতাসের তারেই আলাপ তেরোবছর গাধাটি পাথর পথের ধারে সে জড় তারপরও ভারবাহী তাকে বলেছি সে হেসেছে
সে সারাদিন স্তন পান করে রাতভর ঝিমায় ভোরবেলা স্নান করে আড়াইঘণ্টা নয়মিনিট কেঁচো আর কাঁকনের জোড়হাতে পরে ঢেউ খানিক জিরিয়ে নিয়ে সাঁতার ভুলে দাঁড়ায় দুধঘুম চোখে জড়িয়ে বামহাতে ছাইপাশ তার চাতালের নাম নেই জানা যাবে শেষে সুগন্ধি শ্যাম্পুর বিলাস চুলের খেলায় ঝিকি তার শরীর নিমের ডাল ছুঁয়ে পরিক্রান্ত সুখ
প্রেতিনী মৃতের সকল নৈঃশব্দ্য ভেঙে দেয় প্রেতিনী শাদা আর কালো পূর্বপশ্চিম আমি তার উরুমূলে প্রাণ সঁপে রক্তপান করি
গভীর বনে একটা করাতিয়া ক্যাম্প আছে তার দূরগামী চোখ আমাকে গ্রাস করে আমি করাতকলের দিকে তাকিয়ে থাকি করাতিয়া দল একদা কাঠ এবং গাছ ছিলো নপুংসক বনষ্পতির ঝাড়ে শুকনো রতিরঙ আমার ডান কাঁধে বসে বাঁ পাশের প্রহর প্রহর একদিন করাতের দাঁতে ক্ষয়িষ্ণুশব্দ ভাবি করাতের ভীষণ এক দাঁত হয়ে যাই
করাতিয়া আর মৃত্যু যুগলবন্দী নাচ আমাকে ঘিরে সাজিয়ে চলে অমৃত ক্রন্দন দেখি আমার শিকড় বিস্তারিত করেছে বন
পাহাড়ের ছায়ায় দেড়মিনিট ঘুমোতে ১৯১০০৬
কারা এতো কথা বলে সারাণ ঘুম ভেঙে যায় তন্দ্রাবিবশ চোখের ঝিরঝির শব্দের উৎস সন্ধান করি কারো পরিচয় নতুন শিলালিপি খুঁড়ে দেখি সূর্যমন্দির ভাস্কর্যের বুক খুলে জিব দেখায় তারপরও তারা স্তব্ধ হয় না
মালার সুতোয় বাঁধাপাখি উড়ে স্বপ্নের কাছাকাছি চিলের পাখায় চোখ রেখে একা সুতো ধরে আছি
আর লেবুপাতায় ফুরিয়ে যায় দিনের ২৫০২০৬-২
আঙুলে বেঁধা পতঙ্গ ভাস্কর্যের দিকে তাকায় অডিকোলনের গন্ধে ভেসে যায় ঘরের বাতাস ভাঙা জানলায় বসে দুখানি চড়ুইপাখি কিছু মদ জমে আছে পানির বোতলে জলের তৃষ্ণা আজ আকাশের চিল এখানে রোদের আঙুল মোমের মতো গলে পতঙ্গ শুকনোপাতা
এখানে গুনে গুনে ডুবে যায় হলুদপাখি ও পাপ আর লেবুপাতায় ফুরিয়ে যায় দিনের উত্তাপ
আমি তো ঘামের ছন্দ ভালোবেসে ১৭১০০৬
মৃতদেহ দেখে আসি নি তারপরও আতরের গন্ধ পাই এ কেমন বিবমিষা বাহুতলে বুঝি আতরের শিশি ভেঙে গেছে কল্যাণীয়দেহের অদূরে সটান দাঁড়িয়ে সূর্য বিচ্ছিন্ন শব্দতটে জ্বলছিলো জোনাক পরীঘুমচোখে হারিয়ে গেলো কালের শোলক তীর্থপোড়া ছাই স্বেদতপ্ত ঘ্রাণের যাদুকর হরিলুটে পেয়েছি উত্তর বিপরীতদেহে নুন ছিলো ফেনাগন্ধ নদীশুদ্ধতা তারপর যদি কথা ছিলো কেনো আতরের গন্ধে ঘনাবে প্রত্নপলির পরত আমি তো ঘামের ছন্দ ভালোবেসেছিলাম
জানলাখানি গোপনখাতায় লিখেছি একদা ২০০৪০৬-২
মনে হলো একফালিহাওয়া লিখে ফেলি গোপনখাতায় খাতাটা হারিয়ে গেছে শহরের পথে চাইছি জানলার বুক গলে আসুক পৃথিবীর সমস্ত বাতাস আসুক ঘাস আর কলাপাতায় ভর করে জানলাটা পালিয়ে গেছে কী অবলীলায়
শহরের রাস্তাটা উঠেছে শেষে করিডোরে জানলাখানি গোপনখাতায় লিখেছি একদা অস্ফুটভোরে
আমার চোখ আটকে থাকে জানলার ০৩০৩০৭
চাঁদ কোথাকার নদীস্রোতে ভেসে আসা পাথর কৃষ্ণকায় গোলাকার শুয়ে থাকে আমার নিরাশ্রয় বালিশের পাশে গুনে শ্বাসকষ্ট গুনে নির্ঘুমজ্বর চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি চাঁদ একটি আঙুলের ছায়া ফেলে খাতার উপর ছায়ার নিজস্ব কোনো শক্তি নেই ছায়া ভয় দেখাতে পারে চাঁদের আলোয় আরো বিবর্ণ এ বিবর্ণচোখ চাঁদের চারপাশে একটা টিকটিকি ঘুরে চক্রমন আমার চোখ আটকে থাকে জানলার কাচে
তারপর বাহির হয়ে ২১১০০৬
সে জমিয়ে রাখে মধু দুধ আর মদ মদিরচোখে চৈত্রের রাত নৃত্য করে সে বসন এবং জল দান করে দাঁড়ায় সে সরোবর হলে অবগাহন করি একবেলা সকালের লিপ্সা আমার তারপর ওইখানে মুখ রাখি পান করি মধু দুধ আর মদ অমর হই আর সে কেঁপে কেঁপে হয়ে যায় পাথর তাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করি তারপর বাহির হয়ে আসি
জলতেষ্টা আছে আমার ০৮০৩০৭
তীরে যেতে যেতে পূর্বের সকল বিস্বাদ ফেলে আসি জলতেষ্টার পেছনে উজ্জ্বল সপ্তকের মায়া ঘুম ফেলে দুলে সূর্য হরিণের ছায়া ক্রমে চক্রমিত প্রগাঢ় প্রমোদ ভোরবেলা ঠাণ্ডাদেয়াল জাগে সন্তরণের বাহুতে রহিত শক্তিসুর নিক্বণমৃত রোদের নূপুর
আমি যাবো পথ করে দাও জলতেষ্টা আছে আমার কাছে
যে আসবে খানিকটা মেঘ গাঢ় ১৬০৪০৭-৩
কাউকে বলি নি হলুদসূর্যের উৎপ্রেক্ষা প্রতিদিন আসে আকাশে চলে আসে হিশেবের সুতোয় টানটান সুতো ছিঁড়ে গেলে কিছু উড়ে উড়ে উড়ে খসে পড়ে গাছের ডালে সে জানে না শব্দতপ্ত পানিপাল কিভাবে আসে তারা কিভাবে ঘিরে আসে বাতাসে ভর করে
কাউকেই বলি নি যে আসবে খানিকটা মেঘ গাঢ় করেই আসবে
যতো কালো শুষে নেবো অনিল ১৬০৩০৭
কাকডাকা রাত কাঠবাদামের পাতায় আটকে পড়া শহর কাঠবাদামের পাতা সহজাত লাল জোছনায় ভিজে প্রিয়তম কিশোরীর হাতের উঠান ধুলোধোঁয়া শব্দের কারখানা গাছের শোভা অতিশয় চিহ্নাবলি সংগ্রহ করেছি সংগ্রহ করেছি চোখের উজ্জ্বল গ্রামে কারো নামে নয় নিজেই করেছি রাত্রি যেখানে থামে
তারা প্রত্যেকেই নিজেদের ঘর বেছে নেয় প্রত্যেকেই ঘরের দরোজা বন্ধ করে দেয় তারা জানলা খুলে দেয় শিকলভাঙা রাতে চাঁদ প্রধান নয় নক্ষত্রও নয় অ›ধসময় ঘিরে রাখে পত্রপাতে এইপত্র তেতুলের পাতা তারপর সে আসে
তার দীঘলচুল নদীর রূপ পরিগ্রহ করে তার হাতে মাদুরমাধুরী তার বুকে বন্ধুর কাদামাটি তার চোখে নিবিড়পানাপুকুর তার উরুসঙ্গম ক্রিটের পেচানো ধাঁধা তার আঙুল দিগন্তে রয়েছে বাঁধা
তারা প্রত্যেকেই তাকে নেয় তারা প্রত্যেকেই একই মাদুর পাতে তারা প্রত্যেকেই দরজা খোলা তারা প্রত্যেকেই জানলায় আগল
সে আসে প্রতিরাতে ঘোর নিবিড় পত্রপাতে সে প্রতিরাতেই চলে যায়
আর হাহাকার বাজে প্রতিটি জানলায়
দুটি হাত বুকে ভাঁজ করা ০৯০৯০৬-২
পাথরে কেউ পরিয়েছে হাতের রেখা পাথর ভাঁজ খুলবে শূন্যতার শূন্যতা আগত সন্ধ্যাকে খুব চেনে পাথর চেনে না ওই হাতে কোমলতা ছিলো পাথরের কাছে হেরে গেছে
পরাজয় রূপবতী বটে অস্পৃশ্য নয় দুটি হাত বুকে ভাঁজ করা আছে
শত্রুহীন তবু লোডশেডিংএ ব্ল্যাক ৩১১০০৭
ফ্যানের শব্দ ক্রমশ বাড়ে বাতির আলো কমে হেমন্ত বেঁধেছে সকল জানলা কুয়াশার ঝড়ে
অনেকেই জানে না দীর্ঘযুদ্ধের গাথা কখনো কান্নার রঙ ছেঁড়াকাঁথার আধার তুমি যাও খালপাড় ধরে ফিরে এসো
আমার চেখেই তার শেষ ০৭১০০৬-৩
সুর খুঁজে পেয়েছি প্রিয়তম অনুষঙ্গের কাছে বিস্ময়ের পাশে একটি পলাশ তার নির্ঘুমচোখ আমাকে বলেছে মাছ আর নিষাদের কথা শ্মশানের পারে চাঁদ উঠে য়ে ডুবে যায় ভস্মগীতের ব্যঞ্জনা ছেড়ে যায় উত্তর আকাশ
আমাদের পানপাতা লাল হলো মাছ ও জোছনা পরিযায়ী ঘুম আমি ক্রমশ পলিতীরে কাদারঙ আমার পায়ের পাতায় নদীর স্মৃতি নখে বালি আর শঙ্খের গন্ধ বন্ধচোখের দরোজায় রোদের লোবান
আমি উদ্বাস্তুচোখ নিয়ে এসেছি দুইফোঁটা নুন রেখো দুটিচোখের কোণে তারপর একটি নদী বইবে ভিতরে তারপর একটি সমুদ্র নৃত্য হবে বাহিরে
দেয়ালে সাপগুলি রেখেছি সেলাই ১৪০৩০৭
দেখা নেই চোখের গভীরে নদীটা রেখেছি কাচের ঘরে একা থাকি দেয়ালে সাপগুলি রেখেছি সেলাই করে
যে কাঁপে সে আসে ২০০৪০৭-২
কেউ পাথরে বসে জলে পা ডুবিয়ে উচ্চকিত তারের রেখায় কাঁপে আকাশকুসুম ঘুম ভাঙে বরফ আর পাথরের রতির ঘ্রাণে বর্ণাঢ্য অহমের পশমে ঢাকা শীত কুয়াশা আর গাঢ়নীল হয় না কখনো পরিত্যক্ত পত্রে জমা পড়ে একফোঁটা কাম কারো নামের খেদ ধরে উড়ে বিদেহি উড়না প্রকাশিত সুরের স্বরগ্রাম সন্ধ্যার করতলে যে কাঁপে পাথরে পা ডুবিয়ে নদী তার হাওয়া হাওয়ায় ভর করে ঝড় আসে যে কাঁপে সে আসে বাতাসে
চোখে সূর্যের ১১১২০৬
শ্মশান থেকে ফিরেছি বিছানায় উড়ছি শীতলছাই জোনাকদেহ আমার কাঁথার খুটে তার কান্না লেখা সে এখন বাতাসে কমলাকান্ত রোদের হরিণ ছাই হতে কয়লা কয়লা থেকে কাঠ না হয় রক্তমাংস কাঠ থেকে পাতাবন পাতায় গাঁথা শ্মশানপ্রিয় চোখ চোখে সূর্যের অসুখ
একদিন শঙ্খশব্দে প্রতারিত হবে ০৪১১০৭
কোথাও শঙ্খশব্দ শুনে শুনে প্রতারিত শ্রবণ কোনো পদচিহ্নের প্রত্যুষে যেশব্দ পূর্বগামী নিশ্চিতুধা ও গানের আঁচলে মৌমাছি উৎসব উৎসব শেষ হয় না একদিনও পরস্পরবিরোধসহজসত্য এসে দাঁড়িয়েই থাকে দুবেলা রোদের পাপ ত্বকে ধরে গ›ধ বিলানো জরজরদেহের উত্তাপ স্যাঁতাপড়া মায়া আনে আমাদের যৌবনে গানের সরলতা শেষ নয় আমাদের যৌবন কটিবন্ধে ঝুলে থাকে ঝুলে থাকে পূর্বাপর সুরের মৌতাতে একা
একদিন গাছপাতাছায়ার পাপে উজাড় হবে বন একদিন শঙ্খশব্দে প্রতারিত হবে আকুল শ্রবণ
চাঁদটাকে ঢেকে দাও চাঁদে ০৫০৫০৭
আহা চাঁদটা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দাও তাকে বিমূর্ত বাতাসে উৎসবের করতাল জোছনায় চমকে উঠে আকাশের বিদ্যুৎ শেষরাত সমাপন করেছে কোন আয়োজন সমস্ত নদীচরে সিলিকন জ্বলে সমস্ত গাছের ডালে জ্বলে অন্ধকার একটি প্লাবন গায় বন্যার গান চাঁদটাকে ঢেকে দাও চাঁদে ডাকছে বান
ঘুঙুরের রঙে লেখা নৃত্যের ২৯০৬০৭
কারো রাতের অসুখ রাত্রি গত হলে পাল্টে ফেলে রঙ শঙ্খ বাজানোর কালে আসে কালীমন্দিরের ঢাক শুনে আসে ঘোলাজলের তলে সে অজ্ঞাত সাঁতার মাছ হলে মাছ অথবা শিশ্নহীন রাতের অসুখে অভাব আছে কাদাগন্ধসময় ভাঁটফুল চেনে
ঘুঙুরের রঙে লেখা নৃত্যের বৃত্তান্ত রাতশেষে ঘুঙুর হারিয়ে যায়
জানলাখানি রেখেছি ২৩০৯০৭
আমাদের সাজানো বারান্দায় ধূলি উড়ে বাতাসে মাছের আঁশটে গন্ধ কাঠবিড়ালি পাখি হলো পলাশের ডালে আমি পৃথিবীকে বসন্ত ভেবে জেগে উঠলাম জলার ধারে কাদার রঙ নীল আমি তৃষ্ণা নিয়ে জলাশয় ছেড়ে এলাম
বারান্দায় কাদাগন্ধধূলি উড়ে কিছুদিনপর বাতাস বইবে দক্ষিণে জানলাখানি রেখেছি উত্তরে
কাল যদি দেখি উড়ে গেছে নদী ২৯০৩০৯
কাল যদি দেখি উড়ে গেছে নদী ও নরক নরকে নিঝুম বালিয়াড়ি বালির কবর কারো সন্ধানে নেই কেনো নিরাময় পান জ্বরের ঘুড়ি উড়ে পূর্বের বিপরীতে পুড়ে ওখানে দিগন্ত জ্বলজ্বলে কাঠকয়লা হলুদ এতোটুকু বুদবুদ উঠে মিলিয়ে গেলো শ্যাওলার প্রাণে গোপনেই প্রভাতসকাল কাহাদের প্রথাগত রাত কাদের বাগানে বোশেখের পুবে এখনো ঢলঢলে গাছছল গাছও কখনো ছলনার ভাষা শিখে বৃক্ষ পেছনবনে সহবাস রেখে ফিরে একরাত
ফুলচুষিপাখিদের চরে লেগেছে পুষ্পমড়ক কাল যদি দেখি উড়ে গেছে নদী ও নরক
সে অন্ধকানে শুনে ফেলে ঘুম ১১০৪০৯-২
গোরখোদকের চোখে ক্লান্তি তারপরও কোথায় পায় পলাতক নত্রদল হাতের ভিতর রোদের বাহন সারারাত কী খুঁড়ে সে জানে নি একদিনও মাটি তাকে বলতে চায় ইতিহাস সে অন্ধকানে শুনে ফেলে ঘুমপাড়ানি গান
বন্ধজানলার ফাঁক গলে আসে কামিনীগন্ধ টের পাই গন্ধে শীতের রাতেও সাপ বহিরাগত খোলস পাল্টায় এবং গর্তে ঢুকে পড়ে কখনো গর্ত ভুলে যায় খাটের তলায় ঠাণ্ডামেঝেতে মাথা ঠুকে কামিনীগন্ধ থামে না
আমি জানলা খুলে দিই আমি জানলা বন্ধ করি
তারা পরস্পর নাম জানে না ২৫১০০৯
বাতাসের তারে ঝুলে আছে ছায়া ঘাম জমে ক্রমশ বরফ তারা অন্তরালের সুতো খুঁজে ফেরে তারা পরস্পরকে স্পর্শ করে ভ্রান্ত তারা চাদরের ভাঁজে লুকিয়ে রাখছে লাল দুইটি বালিশের ভিন্নবসন তাকিয়ে আছে আলো ডুবে যাচ্ছে মেঝেতে তারা ক্লান্ত পরস্পর দেখছে নিজেদের
একজনের ঠোঁট নড়ে উঠে শব্দহীন তারা পরস্পর গুজে নিচ্ছে ঠোঁট ও সন্ধ্যা শহরের বাসগুলি কচ্ছপ তাদের ছায়া পরস্পর চুম্বনরত তাদের চোখ মরামাছের স্মৃতি বাতাসে ঝুলিয়ে রাখছে ছায়া আর শরীর দেয়ালের ফাঁটলে অন্ধপথের রেখা তারা পরস্পর নাম জানে না খাড়ির
ফেরিঅলার ঝাপিতে লুকিয়ে ১৮০৯০৮
রোদে ভাঙা দুপুরে নিজেকে পেলাম একা হাতে একা সমুদ্র জমালাম তারপর পিঠজুড়ে শীতকাল এলো গলিপথে নক্ষত্রের দেখা পেয়ে অবাক আমি চুপিচাপ ঘুরে ফিরে আসি ফেরিঅলার ঝাপিতে লুকিয়ে থাকি
সে প্রতিরাতে আমার ছায়াকে ১৩০২০৮-১
সে মুখোশের আড়ালে মুখবিহীনকে নিলো তার ঘ্রাণশক্তি ক্রমশ বাড়ছিলো সে মাটি আর জোছনার রতিগন্ধও নিলো তুলে রাখলো সৌখিনফুলদানিতে একা ফুলদানি পোড়ামাটি নকশাকরা দ্বিতীয়প্রহর বেহাগের ঝিরি উড়ে আসে ধীরে
অশ্রুতপ্ত শীতকাল ছাইবর্ণ ধারণ করে কাঁপে কোথাও আকাশ হয়ে আছে হিম সে মুখোশের কারিগর সে চেনে জলের শুদ্ধতা মুখহীনছায়া শূন্যতার আততায়ী
সে প্রতিরাতে আমার ছায়াকে ছিন্ন করে
সাবলীল বন ২৯১২০৭-৩
আমি প্রথম শব্দসকল নিশ্চিত চাই ওরা আমার ওষ্ঠাগত হবে বনতলে চাই ঝরে পড়া আলো আমাদের চিৎকারে বনতল ধূসর হোক আমি দুআঙুলে তুলে নেবো আলো সাবলীল বনজ্যোৎস্না
একখানি ঘর আছে হবে না ০৯১১০৭
ডুবেছে ঘরের তাঁত বদ্ধহাওয়ায় বন্ধজানলার কাঁচে কুয়াশা বাষ্প আত্মকাম কোন ঘ্রাণে করে বিচরণ ঝুলে থাকা কাপড়েরর দঙ্গলে ছত্রাক সবুজাভপাপে জরজর দেয়াল
দুইখানি জানলা বন্ধ চিরদিন একখানি ঘর আছে হবে না বাহির
আমি ঠিক দেখে ২৯১২০৭
ওটা আমার বিভ্রম ওখানে বৃত্তের ভিতর বৃত্ত ছিলো ওখানে ভূমিজাল গোলকধাঁধা বৃত্তাকার পুকুর চুরি করে দুপুরের রূপ দুপুর একফোঁটা রোদ ঝরে পড়ে ঠাণ্ডাকোমল নদে
আমি ঠিক দেখেছি
শিখে নেবো বিভিন্ন ০৬০১০৮-২
অবশ্যম্ভাবী সৌন্দর্য উড্ডীন উন্মোচিত হও আমিও হয়েছি অধীর যে সুতো উড়ে গেছে ঘুড়ির পায়ে ঘুড়ি সে এখন আকাশের চিল চিলপাখি ছায়া ফেলে মাঠে যাচাই করি রোদ সঘন দরোজার পথ ফিতের মতো বহুদূর জল রুপালি আমি বিষাহত নই পরিত্রাণ ফিরে ফিরে আসে
চিল থাকুক মেঘ থাকুক চিলের দখলে তুমি থেকো নিচে দীর্ঘ জল তারপর একদিন ডুবে যেতে যেতে শিখে নেবো বিভিন্ন সাঁতার
এই ব্যাপারে আমরা ০২১০০৮
এমন গহ্বর আছে যার তল নেই এইখানে বন্দী থাকে অন্ধকার অন্ধকারের কোনো চোখ নেই অন্ধকারের আকার কল্পনাতীত গহ্বরে আলোর প্রবেশাধিকার নেই এই ব্যাপারে আমরা জন্মান্ধ
উল্কি উড়ে যাচ্ছে কারো ০৬০৭১০
কে এঁকে দিয়েছিলো ঘাড়ের দুইইঞ্চি নিচে আকুপাঙ্চার এখন আল্ট্রামেরিন উড়ে যাচ্ছে উল্কি নিঃশ্বাসের অমরতা কে এঁকে দেয় হেমন্ত এলএসডি ভোর জ্বলে উঠে ছাই শুধু চিনাবাদাম আছে ড্রয়ারে পূর্ণ করেছে একপাশ স্তনে তিল আর চিবুকে কাটাদাগ কে এঁকে দেয় পুষ্পক
একটা সুই আঙুলের ফাঁকে বেকার এচিং প্লেট য়ে গেছে তালার ওপারে কে এঁকে দেয় আকুপাঙ্চার উল্কি উড়ে যাচ্ছে কারো চোখ
গুইসাপটি ঢুকে পড়ে জবার ২৪০৬০৭-২
আনন্দের হলুদকুসুম পরিব্যাপ্ত কামে রঙিন গুইসাপের মাথায় ভেঙে পড়ে বহুদিন সাপটি থাকে সংলগ্ননর্দমায় সারা গায়ে কাদা মাখে কখনো সখনো কুসুমের ভাই ডাল ভেঙে পড়ে যথা জায়গায় দৃষ্টিকাড়া সন্ধ্যায় পরস্পর প্রেমে কামাবশসত্য তারপর একদিন ভাইবোন ঘাতগানে অমর গুইসাপটি ঢুকে পড়ে জবার জংলায়
আমি যতো অবিন্যস্ত অক্ষর ১২১১০৯
কার কান্না শুনছো এই পরিক্লান্ত রাতে সে ভান বুনে পালিয়ে যায় খরার দেশে আমি খরাসহ এইসব কান্না তমালে
সে মিথ্যার ভিতর রূপ পরিগ্রহ করে সে মৃত ক্রমে রাত্রির পাতায় সাজায় নখ আকাশ এবং আলোকে অস্বীকার করে
আমি রঙ পান করি আমাদের কুয়াশায় সে অস্তিত্বহীন জেনে রঙধনু ভাঙি সে আসে কবর এবং হাসির অন্তরালে
ঘূর্ণিচিহ্ন আড়াল করি তুমি ডানপাশে খুলে রাখো জাল বিন্দু ভেঙে দিই প্রযতনে তুমি দুআঙুলে ঘষো সকাল হাওয়া নিভে আসে তুমি হা করো ধীরে তোমাদের ভিড়ে আমার উড়াল
পাতাটি জানে ১৯০১০৮
একটা কাক আসে খুব ধীরে দাঁড়ায় টেবিলে উর্ধ্বমুখ চঞ্চু টেনে উড়ে যেতে চায় এই সুখ রাত্রির কালো তার চোখ শীতের কোমল জলা অনুগত শব্দসুর নিষিক্ত প্রতœপাড়ের খেয়া ক্রমশ নৌকো নৌকোর পাড়ে কঙ্কস্মৃতি এখন প্রচ্ছন্ন একটা কাক উড়ে যাবে তার রাত্রিঢাকা শরীর রোদে ভিজবে না একটি পাতার ভাঁজে তার কান্না লুকানো পাতাটি জানে না
ভুলে যাওয়া ভুল মনে করতে ০২১২০৭
একটি তারায় জ্বলে থাকে যাকিছু আলো কারা তাকে ভুল নামে ডাকে একটি পাতায় ঝুলে থাকে নদীগন্ধ স্মৃতি কারা পশ্চাৎ মাঠের সহচর একদিন পাতা হলুদ হলে ঝড়ের কামনায় জোনাকির ঝাড়ে ঘনীভূত রজঃবতী রাত কারা চারদেয়ালের ঘেরে রিক্তহস্ত ভাঁজ
আকুল নৈর্ঋতে আতপ্ত জলচর ভুলে যাওয়া ভুল মনে করতে চায়
পিতা এই বর্ষায় তোমার রক্তের ২৪০৩০৯
ভুলের বয়স কতো তিনি জানতে চাইলেন আমি কামনার শীতে ফিরে গেলাম হাতড়ে পেলাম বনছাপ ধুতির পুরাণ তাকে বললাম বয়সের জিবে ধনুকের বিষ তিনি আনমনে চোখ বুজে ভিজে গেলেন তার ভেজা ত্বকে কিরীটঝিলিক তার দাঁতে মাংসের হাড় বিপণন শেষে জায়নামাজ বিছানা বালিশে রূপালি আযানের দাগ তার শিরায় মেঘডম্বর
পিতা এই বর্ষায় তোমার রক্তের রঙ শাদা
মধ্যাহ্নসুরের জ্বর পৃথিবীর ০৬০১০৮-৩
কান্তবিছানা একজন শুয়ে আছে দীর্ঘ পা টেনে পূর্ণ করেছে শয্যা সমাপ্ত করেছে যা আছে শেষ সে একটুখানি চোখমেলে তাকালো দরজাজানলাছাদ সমস্ত কালো
মুমূর্ষু দিনের সুবর্ণশহর পড়ে থাকে মধ্যাহ্নসুরের জ্বর পৃথিবীর পাঁকে
যাদের দাঁতে চিন্ময়গুল্ম আর ছাল ২২১০০৯
সন্ধ্যারঙ পশুগুলি ডাকাডাকি করে সমস্ত সময় তারা লুকিয়ে থাকে তাদের গায়ে জড়ানো সন্ধ্যা সাতটা তেরো তাদের পায়ের নখে ধ্রুবলাল উপকূল অভিলাষ
কোরাসের অন্যপিঠে নিঃসঙ্গ এক কথার যাদুকর কোরাসের অন্যপিঠে নিঃসঙ্গ এক কথার যাদুকর
অথবা দুঃখবোধ তাড়িত করে তারাবাতি ক্ষয়িষ্ণু পশুর পাণ্ডুর লোল আর গন্ধ যাদের দাঁতে চিন্ময়গুল্ম আর ছালসর্বস্ব আত্মজ
আমরা বিভেদ হচ্ছি ট্রাপিজিয়ামের ০৬০১০৯
পরস্পরের আঙুল ছেড়ে যাচ্ছে নখ ও নখর করতলে বপন করছি উৎসবের জীবাশ্ম বপন করছি সূর্যাস্তের কেদ আর কদাকারমেঘ মৃতঘাসের ছায়ায় মাটি আর পিঁপড়া চক্রমন
উত্তরের দেয়ালে কলেপড়াইঁদুরের ত্বকের রঙ হাওয়ায় কর্পূরের শাদাশাদা ঘ্রাণ ক্রমে বর্ণহীন আমাদের পাঁজর একই দেয়ালের জারজ আমরা বিভেদ হচ্ছি ট্রাপিজিয়ামের রেখা ধরে
আমার নিঃশব্দ ট্রেন আসবে ১২০৩০৯
কেনো বসে থাকি এই নিস্তাপ টেবিলে চোখের ছুরিতে দৃশ্যগুলি চিরে দেখি ডানপাশের হাওয়া ভেঙে বাঁপাশে সাজাই কুকুরের চোখে বিহ্বল তন্দ্রা নামে বিড়ালের চোখে বিহ্বল তন্দ্রা নামে
ছায়ারা প্রলম্বিত হয়ে ক্রমে লুট করে রাস্তা এই কাক এই উপবন বিস্তারিত বর্জ্য ঘুমঘুম ঘ্রাণ ছিঁড়ে যেতে চাই কে গন্ধের উৎস সন্ধান করে কে বসে থাকে এই নিস্তাপ টেবিলে দূরে বসে বিলাপিত বয়েসী মাতাল প্লাটফর্ম ছেড়ে চুপিচাপ নেমে পড়ি বুকপকেটে দুপাটি রেললাইন নিয়ে ফিরি
আমার নিঃশব্দ ট্রেন আসবে আমার নিঃশব্দ ট্রেন আসবে
দৈনন্দিন মৃত্যু এবং ১৩০৪০৯
তারচেয়ে আয় উড়ে যাই পাতালে পাতালে দুলছে পাথরের অন্ধকার পাথর কেটে বানিয়ে ফেলি বাতাসের মুখ দৈনন্দিন মৃত্যু এবং যাজক
ওটা ২৯১২০৭-২
ওখানে দাঁড়াও চিরদিন দিগন্তাবধি দাঁড়াও শেষপাতা পড়ে ফেলো মুহূর্তে সমাধির রঙ শাদা একদিন কালো ছিলো বৃষ্টি আর রৌদ্রে শাদা শিশির আর কুয়াশায় শাদা
একটু নড়ো তারপর শাদা তোমার করতলগত শাদাকে পাখি ভেবো না উড়ে যাবে ওটা পাথর
কেউ পাথরের সুমহান ২৪০৬০৭-৩
ঝিমদূরশেষরাতে সে থাকে তার পাখার পত্রদল ক্রমশ যাচ্ছে উড়ে যাচ্ছে উড়ে একাএকা একাএকা শেষরাতের গুহায় পাথরের আলো পাথর আলো দেবে কতো অন্ধকার যেদিন সে পত্রশূন্য হবে কথা আছে একজনই পাবে তাকে কেউ পাথরের সুমহান ধারাবাহী
বাকি সব ঘিরে থাকে জলাশয় ০২০১০৬
ভেনাসের মতো শুয়ে থাকি আরাধ্য ভেনাস শিশ্নিতকাঁটা জানায় উপগতরাত্রিদিন বিহ্বল সনির্বন্ধ কামনায় বেলুনটা ফুলাই ঘুড়ি হওয়ার আগেই কাঁটা বিঁধিয়ে দিই সনখ অদূরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন শাদাদেহ বক তিনি আমারই প্রতিকৃতি বাকি সব ঘিরে থাকে জলাশয় বিস্মৃতি
চলো নেশা ভাগ করি পুরনো পালঙ্ক পালঙ্কের ঘেরে পরগাছা শীৎকার ও খুনসুটি নৌকো ভেঙে ভাগ করি আঘাটার নদ খাড়ির নিচে থকথকে তরল রোদের বাছুর যাকিছু পারাপার এপার ওপার ভাগ করি এসো শ্মশানে গীত গান থেকে সুর
আমি আর সে মূলত এখনো অভিযোজন ০৬১১০৯
কে বললো আমি অভিযোজন জানি শিশ্নিত কাঁটায় আটকে আছে ছায়াচুর দুপুরের রূপ আমি নিরন্তর অন্ধ হয়ে গেলাম একটি জংলিগুল্মের কথা মনে হলো কেবল স্তনের শিরা তার ছুঁয়ে গেছে পূর্বের সকল জনপদ
যে কখনো এই হাতের ভাঁজে দিয়েছিলো হিম যে আমাকে হেমরাত্রির তীরে ঠাণ্ডা বনরেখা যে তবে চুলের আড়ে লুকোতে দিয়েছিলো মুখ কে কবে হয়ে গেলো হাওয়া আর বাতাস যে সকল বাতাস আমার কুড়ানো কেনো যে কুড়াই কেনো যে কুড়াই কেনো যে কুড়াই
আমি আর সে মূলত এখনো অভিযোজন জানি না
শীত কোনোদিন জমেছিলো ২৮০৩০৯
অনতিদূরে কোথাও তখনও বেহাগ বাজে রাত ভেঙে জেগে উঠে যেমন দেহের ভাঙন বিবাগীভাঙন জানে বাঁশিটার পরিণত নাম নামের রূপের ভিতর যেনো বা অচিন দালান দালানের ভাঁজে ভাঁজে লোহার হাড়েরা জাগে জেগে জেগে ভিজে যায় বয়েসী মাঘে শীত কোনোদিন জমেছিলো শিরার
আর বাকি থাকে জানলাবতী ০৮০২১০
উত্তরের জানলা জানে দখিনজানলার বেদনা হাওয়ার টানে পরস্পর ছুঁয়ে ফেলে তৃষ্ণার চর জানলাবতী রাত খেলা দেখে উলম্ব কাঠফুল
তারপর অনেকদিন পরিচিত কাচঘরে হল্লা প্রতিধ্বনি তীরে একচোখা ক্ষেতের খোঁয়াড় কেউ যায় নি ওধারে জেগে থাকে কঙ্ককাল বিছানার পাশে ভাঙাঘুম রেখে স্নানঘরে য় এইটুকু ফুরিয়ে গেলে রাত নয় উচ্চতা থাকে বিস্ময়ের দাঁতের মাঝখানে একজোড়া ফাঁক
আর বাকি থাকে জানলাবতী রাতের করাত
আমাদের অন্ধকারের নাম সরীসৃপ ২২০২০১০
পুষ্পহত্যার আগে দেখে নাও নিজের মুখ যদি দেখো আয়নায় অন্ধকার তাহলে ঠিক আছে যাপনের মানে ঘৃণা আর মেনে নেয়ার পাশে রেখো ছুরি ফুলের রক্তও রঙিন হবে ভেবে ভেবে ফেলো না নিমেষ
আমাদের অন্ধকারের নাম সরীসৃপ আরোহণ
আমি কি চোখের ডালপালা ভেঙে ২২১২০৯
রাতে এঁকেছি একাকী একটি গানের ছায়া এখানে যাকিছু পরিযায়ী সুর ছিলো ছড়ানো শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অন্ধ শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অন্ধ মাধুকর আমি একটি কান্না আঁকতে চেয়ে গান রাতের গাড়ি চলে গেছে আমাকে রেখে গাড়িটির হৃদয় ধাতবপ্রাণের পরে ঝুলকালি এই কালো শহরতলিকে মুড়িয়ে রাখে শূন্য নদীতীরে আমি বালির বিভাস আমার বুকের ভিতর কারো নিঃশ্বাস চুর কে আমাকে বিভাগ করে বিবাগী ভাঙন দ্বৈত হৃৎকম্পনে একাকার সিলিকন
কেউ কি আমাকে ডাকছে যদি কেউ আর কারো সাথে না বলে কথা যদি কেউ গোপনে এঁকে ফেলে রাতের কবিতা যদি কেউ উড়ে উড়ে উড্ডীন কোজাগর যদি কেউ পুড়ে পুড়ে জানলাহীন ঘর সে তার নিজের ভিতর ভেঙে দেয় সাতস্বর যদি সে আর বালিশ কেঁদে কেঁদে অনসূয়া নদী
আমি কি তাকে শূন্য করি নি একা আমি কি চোখের ডালপালা ভেঙে বানাই নি পাখা
সিসিফাস তোমার রোদের শহর ভুল স্বপ্নের ০১০৩০৯
সিসিফাস তোমার রোদের শহর ভুল স্বপ্নের উপপাদ্য যে পাহাড় ও পাথরের ঘ্রাণে ও পরিক্রমায় শুদ্ধ হয়েছিলে এখন পুনর্বার তোমাকে ডাকে পাথর এখন পুনর্বার তোমাকে ডাকে পাহাড়ের দাঁত ও নখর তুমি বৃত্তের পদলেহি তুমি অবিনশ্বর তোমাকে রোজ আয়নায় দেখি তোমার চুলে সিঁথি কাটি তোমাকে দাঁত দেখাই
পকেটে ময়লা ছেঁড়া দুটাকার নোট ডানা চুলকায় অস্থির তার বুকের দোয়েল ও শহিদমিনারে খুশকি ও উকুন তোমাকে তারা নপুংসক শুয়োর বলে গালি দেয়
আমার আয়না ভেঙে তুমি বেরিয়ে পড়ো পাথরটাকে ঠেলে তুলো পুর্নবার সেঁটে দাও পাহাড়ের হা করা মুখে চিরদিন তারপর তুমি আর আমি দোয়েলের কাছে যাবো রোদের ডালপালা তারপর আমরা দুজনে শহিদমিনারে নতজানু কঙ্কবালক
সিসিফাস তোমার রোদের শহর ভুল স্বপ্নের উপপাদ্য
বাসগুলি জানলার কাচে মেঘদলসহ শহর ২৮০৭১০
ধরাশায়ী হবে বলে রাতখেকো জোছনায় আসে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ায় আপাদগ্রীবা আশঙ্ক মাছিদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া পতঙ্গ জেনেছে তাকে কবন্ধের স্মৃতি প্রতারক খিলানে ভুল নক্শার খাঁজ কেউ জেনেছিলো কিছু তার নামধাম লোকাচার
কড়িকাঠে আরোহী ভূমিতল বাসগুলি জানলার কাচে মেঘদলসহ শহর ছেড়ে গেছে শাহরিক কলতলায় দৃশ্যমতি হলো না পূর্ণিমার কলুষ এ শহর তোমাদের জ্বর ছয়তলা ছাতের ঘরে কবন্ধ চিত্রকর ধরাশায়ী হবে বলে রাতখেকো জোছনায় সে আসে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ায় খেলা খেলা বইপাঠে ঋষি কবন্ধের স্মৃতি দেয়ালের পলেস্তরায় খসে কেঁচো
বাসগুলি জানলার কাচে মেঘদলসহ শহর ছেড়ে গেছে
শূন্যতার পরিমাপে খুলে দেবো ৩১০৩০৯-২
শূন্যতার পরিমাপ জেনে খুলে যাবো শিরাসুর এখানে এসে খুলে নাও মাইল মাইল রোদ ভয় ভয় দুপুরের বনে গিয়েই হারালাম আঙুল চুলে তখন আরণ্যক নির্জনতা বাতাসেরও ঠাঁই নেই
বহুদিন পাতা ভেঙে ভুলে যাই অরণ্যের চুল আঙুলে অমরতা নিয়ে আর কুড়াই না বকুল রিকশাটির পাশে পাশে উড়ে হাঁসগুলি তার চিরতার ভোরে পান করে বাতাসের নির্যাস দূর বনে ভরে যায় ঝোপ কানাকুয়ার ডাকে নিবিড় তের প্রপাতে অধরলগ্ন মৃত্যুর ধস চিনে নিও চিনে নিও প্রিয় আমাদের কাল ছাই ছাই আগুনের ভাঁজে যাপিত নিধনসুর
তিনফোঁটা জোছনার ক্লেদ মেখে নিও ত্বকে
সে পাশের ঘরে শুয়ে ২৭১২০৭-২
সে পাশের ঘরে শুয়ে আছে সে শুয়ে আছে আশয্যা শূন্য তার স্বপ্নের সমাবেশে সে ছিলো সে রতিরক্তচুম্বন রহিত সে শূন্য তার হাতের ভাঁজে সমুদ্রের ফেনা
প্রতিদিন রাত্রি এলে প্রতিরাতে শয্যা এলে প্রতিশয্যা শূন্য হলে সে হাতের পিঠে ঘুম নেয় সে হাতের চেটোয় নেয় তরঙ্গমালা দাঁড়ায় শূন্যতার কাছে সে পাশের ঘরে শুয়ে আছে
প্রিয় শকুন আমি তাকে ভুলে যাবো ২৬১০০৯
একটি দৃশ্য তার হাতে প্রাচীন রাগিনী শরীর বিষণ্ন দুপুরের রূপ একা একা ঘুরে বেড়ায় ভিড়ের মধ্যে খুব নীরবে এই গোপন কারো ড্রয়ারে একপ্রস্থ চিঠির বিলাপ শুনি তার গান এবং বয়স চারশোবছর ঘুরে আসে চরের লোপাট শূন্যতা রাতুল খেচরের পাড়ায় জোড়াঘুড়ি চিল সবুজ সকাল তার হাত ধরে হলুদ ঢেউয়ে ভাঙে প্রাচীন রাজবাড়ি লাল হয়ে আছে ধোঁয়া সমকামী জানলার কাচে চিড় ধরেছে ভুলরাত সে এসে চিরে দেয় আসঙ্গ যৌবন এপার ওপার স্নান সেরে পারাপার অলকানন্দা লালা ও কাঞ্চন
একটি বাতাস দেখি তার হাতে বাতাসের চুলে সে গুঁজে দেয় বিপন্ন দংশন তার শঙ্কা আমাকে দেখি প্রিয় শকুন আমি তাকে ভুলে যাবো ঠিক করেছি
চিলের পাখায় রোদ লেগে রূপ ২৩০১০৮
একদিন সন্তরণ শেষ হয়ে গেলে আর একদিনও ফিরবো না জলে সাঁতারের মায়া উড়ে উড়ে হবে চিল চিলের পাখায় রোদ লেগে রূপকথা
আমারও অসুখ হলে একটি ঘর বানাবো ০৬০১০৮-৫
সে এসে পাশের ঘরে শুয়ে আছে বহুদিন বহুদিন তার গভীর অসুখ সে লাটাই হারিয়ে আর কাঁদে না ভীষণ ঘুড়িগুলিকে বানিয়ে দেয় চিল চিলের ডানায় দেয় কম্পন সে জলের ওপারে বসে গুনেছে পাথর পাথর সব ছোটো কালো গোলাকার গুনতে গুনতে নব্বইদিন এখন ওইঘরের অন্ধকারে জোনাকিরও নিষেধাজ্ঞা আছে কোনাদিন জ্ঞান হলে আমি খেলতে যাবো কুয়াশার মাঠে কুয়াশা কারো কাছে বড় প্রিয় আমারও অসুখ হলে একটি ঘর বানাবো অন্ধকার জ্বেলে
গাছ ছায়া দিলে সূর্যমুখির কেন্দ্রে চিরদিন ০১০৩০৯
কী শব্দে জেগে দেখি জোনাকবনের পাড়ে বৃত্তাকার শহর শহরে রঙিন রোদ স্যাঁতাপড়া ত্বক আলগোছে শুকিয়ে নেয় হাওয়ার নিশ্বাসে নিশ্বাসের রঙ কবে কোন কামনায় লাল জানতে পারে নি অধিকারী মাধুকর আমাদের গাঙে মলকাবানুর পালা নামে রাতভর বিষে অমর মলকার উজানস্রোত নিষাদ মাতালের চিন্ময়চোখ সন্ধ্যাচিহ্ন যাকিছু চেরাইকলে চুপিচাপ স্তূপরোদ আর জোনাক অষুধের গন্ধে দিঘিপাড়ে চিরদিন কম্পমান ডুমুরের বন গাছ ছায়া দিলে সূর্যমুখির কেন্দ্রে চিরদিন সূর্যসুর চক্রমন
কখনো সে কাঁপে উত্তরে এলো ১০০১১০
কখনো সে জেগে উঠে রাতভর রাতভর কখনো সে চারপায়ে হামাগুড়ি দিয়ে নামে কখনো সমুদ্রে ঢেউ ফোটে শঙ্খপ্রহর
রাত্রিবাসে সুগন্ধি মাখানোর কথা ছিলো ওখানকার সুগন্ধির নাম শুনেছি বেশ গতকাল সন্ধ্যায় সে আমাকে খুঁজে ফিরেছে আমি বুনোসুর আর শরসহ লুকিয়ে ছিলাম যেখানে স্বপ্ন সত্যি হতে হতে ঘুম ভেঙে পড়ে গর্ভহীন নারীর চোখের খোঁপে নড়ে উঠে ফুল
কখনো সে নুয়ে পড়ে একটি তিলের ভারে কখনো তার লালজামা আকাশের পাড়ে কখনো সে কাঁপে উত্তরে এলোমেলো ভুল
দালিমের রাঙা ছকে বাঘ ০২১১০৯
এটা কেনো শুরু হয়ে শেষ হলো না এটা কার ত্বকের ঘ্রাণ গন্ধকে ডুবে আছে মধু বুনোগুল্ম তেঁতে উঠা ঝাড়লণ্ঠন সঘন চন্দনে ডুমোমাছি সুরম্য তালগাছে ঝুলছে তন্দ্রাকীট
কেউ ডেকে গিয়েছিলো অন্যসকাল আমিও ডাকবো লাল দালিমের রাঙা ছকে বাঘবন্দী আঙুল
দেয়ালে আয়না আছে ঘৃণার ১৪১১০৯
দেয়ালের বিপরীতে খালি ক্যানভাস চাইলে একটা রেখা টেনে দিতে পারি আমার চোখ সবুজ এবং চুল সব শাদা একটি দীর্ঘশ্বাস পার হলো নলের বন ক্যানভাসটি পুরনো হলো বহুকাল অনেক গভীরেই আছে নকশার আকর
কর্কটচিহ্নে বিষণ্ন বৈঠাল ঘুরে আসে দেয়ালে আয়না আছে ঘৃণার প্রতিবিম্ব
আমার আকার পৃথিবীর প্রথম ২১০৭০৯
ছায়ার ভিতর পাথরও কাঁদে একা একা উদ্ভিদের ফসিল কে কবে ভিজে যায় জ্বরে এই অমরতা নিঃসঙ্গতার পরিণাম জেনো এখনো দুয়ারে দরজার কড়া নাড়ে হাওয়া হাওয়ার হাত কখনো বাতাসকে ছুঁয়ে যায় এখানে দুফোঁটা মদ চোখ হয়ে আছে মদের ভিতর কৃষ্ণপক্ষ গাঁথা তোমার পাতায় অবরোহী শিরা কাঁপে
আমার আকার পৃথিবীর প্রথমরেখায় সাধা
এখন ওখানে পরস্পর বুনছি ২৯১২০৯
ওখানে অনেক ভোর আলো হয়ে আছে ওখানে আমরা মুখোমুখি হয়েছি আবার স্তব্ধতার ছুরি কাটছে আলো কে প্রথম ভাঙবে এবেলার নৈশব্দ
আমরা অনেক রাত্রি আগে শুয়েছিলাম আমরা শেষের গল্প ভুলে গেছি বহুদিন শুধু কান্না মনে আছে বুকে আমরা পথের আগে ঘর বুনেছিলাম আমরা ঘরের আগে বুনেছিলাম রোদ
এখন ওখানে পরস্পর বুনছি গতকাল
নরকে বাজালাম তিরিশইঞ্চি ১৫১১০৯
ভুল জানলায় বসেছিলে ওগো হাওয়া গান ভিতরে বেজে যাচ্ছিলো অবিরাম যন্ত্রণা আর ঈর্ষা প্রকাশিত হচ্ছিলো রাগ আর ক্ষোভে বুনছিলো মাকড়সা
তারপর ডানহাতে রাস্তাটি খুলে নিলাম রোদ কেটে একটি বিছানা বানালাম শীতের কাঁথা তেজপাতা ফুলের ভ্রূণ নরকে বাজালাম তিরিশইঞ্চি এস্রাজ
আর সহসা লিফটের কথা মনে ০৬০৩১০
সে একজন বুকের কপাট বন্ধ করে ঘুমায় প্রতিরাতে দরজা জানলা বন্ধ হয় সুরতি কেউ বিরক্ত করে না মাছি ও সিলিংফ্যান লোক পরিবেষ্টিত হলেও ক্ষতি নেই তার সে তাদের ব্যবহার করে ছায়া পরিবেশ দুইপা হেঁটে মৃত্যুর দিকে যায় প্রতিদিন কাহ্নপা হাসে ধোঁয়া ধোঁয়া কূয়ার ভিতর তার জীবনটাই উৎসবের পরগাছা ডাল মদের বোতলের ঘষা খাওয়া লেবেল যার হলুদ রঙটা চাঙা করে জিবের তলা বোতল অনেকদিন খালি হয়ে গেছে একা ভালোবাসা মনে পড়ে দেহের স্বেদে ঘৃণাভাষা মনে পড়ে রুমালের ছেঁড়াপাড়ে সকালে ঘুরে উঠা তন্বী সিঁড়ির স্মৃতি উড়ে
সে ভালোবেসে এগারোতলায় উঠে দাঁড়ায় আর সহসা লিফটের কথা মনে পড়ে যায়
আমরা পরস্পর ফিরিয়ে দেবো গান ১৩০২০৮-৩
গাছ তার একটি পাতা ছুঁড়ে মারলো আমার গায়ে আমি তার নগ্নতা দেখলাম সুন্দর তলজুড়ে বিস্তারিত তার পাতার চাদর এই বাস শীত ধীরে করেছে হরণ আজ বসন্তদিন আমরা পরস্পর ফিরিয়ে দেবো গান শয্যা আর বসন
সন্ধ্যা রাত্রি হলে আর ১৯০৮০৯
জলার ভিতর তাকিয়ে আছো তুমি কি মাছ নাকি মাছরাঙা দড়িতে ঝুলছে লাল গামছা এখানে ওখানে নিষ্পলক কেউ আগুনের গন্ধ ভুলে গেছো একদিন সপ্তপদী ধাঁধা ছিলো
সুখের মোহরগুলি ভুল হয়ে যায় অথৈ চুলে ঢেকে গেছে চোখ তুমি সন্ধ্যাকে বললে আয় সন্ধ্যা রাত্রি হলে আর নিভে না
সন্ধ্যার অনু ০৬০১০৮-৪
সন্ধ্যায় একটি ফুল কুসুমিত হয় হট্টগোল এড়িয়ে তার রণ বিস্রস্তদিনের সিঁথিপথে ঘুঘুপাখি কাঁদে অনুরক্তহিম অগ্নিসন্ধান করে পুষ্পবিষ প্রতীক্ষা করে কারো সপ্তপদীশব্দের বুননে মায়াবীচাদর নারী আর প্রেমের আপ্তবাক্য ঢেকে রাখে সন্ধ্যার অনুপ্রাসে
কোথাও নৃত্যপাঠে উলম্ব ০২১১০৯
নির্জন ত্বকের পারে ধরে আছো মদ আজ নিরালা সাক্ষী হোক ডাহুকের রক্তের দাগ এখনো সকাল খুরের ভাঁজে পথের পাথর হিম কাঙ্খে দোলাবে কোন মাঙ্গলিক খরা ধানকূপে আমি আছি আমি আছি তালপত্রে আর তুমি হেমন্তিকা নীল চিহ্ন চিরে আসি চিহ্নে উৎসবে কোথাও নৃত্যপাঠে উলম্ব অমৃত লাল
তাকে চিনি ২২০৩০৫
আমি বেড়ে উঠি সুন্দরস্পর্ধায় আমি শস্যের গোপন প্লাবন তার হাতে তুলে দেবো পৃথিবীর অন্ধকার আমি তাকে আলো নামে ডাকি বাকি থাকে একটি দিন হাজারটা দিন অন্যদিনের মোড়ে দাঁড়িয়ে কাকে খুঁজি
পাশাপাশি বনের প্রান্তে মাঠ আর গ্রাম জেগে অন্ধকার তার চোখের কাঁখে তাকে চিনি না